ঢাকাশনিবার , ৭ জুন ২০২৫
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি ডেস্ক
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ইতিহাস
  5. খেলা
  6. চাকরি
  7. জাতীয়
  8. জামায়াতে ইসলামী
  9. বঙ্গবন্ধু
  10. বিনোদন
  11. বিশ্ব
  12. বীর মুক্তিযোদ্ধা
  13. মতামত
  14. যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ
  15. রাজনীতি
আজকের সর্বশেষ খবর

ছয় দফা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভেসে যাবে সব ষড়যন্ত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ৭, ২০২৫ ৩:৩৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আজ ৭ জুন। ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। আমাদের জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের এক স্মরণীয় দিন। কিন্তু এ বছর এই দিবসটি আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশে উদযাপিত হবে না। কারণ, বাংলাদেশ আজ এক গভীর ষড়যন্ত্রের অন্ধকারে নিমজ্জিত। সেই ষড়যন্ত্রের সম্মুখভাগে আছে ছয় দফার বিরোধী শক্তি, বাঙালির আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের বিরোধী শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি। তারা বাঙালির সব অর্জন ধ্বংস করতে চায়। ইতিহাস মুছে দিতে চায়, যা কখনোই সম্ভব নয়।

১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে চৌধুরী মোহাম্মদ আলীর বাসভবনে কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আফজালের সভাপতিত্বে বিরোধী দলগুলোর সম্মেলন শুরু হয়।

সাবজেক্ট কমিটির এই সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি পেশ করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তানের কয়েকটি পত্রিকা এই দাবির উল্লেখ করে বলে যে পাকিস্তানের দুটি অংশ বিচ্ছিন্ন করার জন্যই ছয় দফা দাবি আনা হয়েছে। ১০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সংবাদ সম্মেলন করে এর জবাব দেন।
বাঙালির মুক্তিসনদ ঐতিহাসিক ছয় দফায় আছে শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রীয় প্রকৃতির কথা।

তুলে ধরা হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা কী হবে। মুদ্রা ও অর্থ সম্বন্ধীয় ক্ষমতার কথাও বলা হয়েছে। রাজস্ব, কর ও শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক ক্ষমতা কেমন হবে, তা বলা হয়েছে।
সব শেষে বলা হয়েছে আঞ্চলিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতার কথা।
বঙ্গবন্ধু ছয় দফার আন্দোলন শুরু করেন ১৭ এপ্রিল যশোরে জনসভা থেকে। বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘ওরা বলেন ছয় দফা বিচ্ছিন্নতাবাদ। ওরা জেনেশুনে মানুষকে ভুল বোঝায়। আমি আমার মানুষের অধিকার আদায় করতে চাই।

আমি ছয় দফায় পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রাব্যবস্থা চেয়েছি। তা কি বিচ্ছিন্নতাবাদ? গ্রেট ব্রিটেনের ইংল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে কি আলাদা সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রাব্যবস্থা নেই? এমনকি স্কটল্যান্ডের আলাদা জাতীয় পতাকা নেই?’
পরদিন তাঁর খুলনার জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার কথা। তার আগেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। উচ্চ আদালত তাঁকে জামিন দেন। সরকার তাঁকে আবার গ্রেপ্তার করে। এই খেলা চলতে থাকে বহুদিন। জুন মাসে ছয় দফার আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে। ৭ জুন প্রকৃতপক্ষে শুরু হয় ছয় দফার আন্দোলন। এই দিন ছয় দফার দাবিতে ঢাকা, তেজগাঁও, নারায়ণগঞ্জের রাজপথে নেমে আসা মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। ছয় দফা আন্দোলনের প্রথম শহীদ তেজগাঁওয়ের মনু মিয়া। ওই দিন বিভিন্ন স্থানে পুলিশের গুলিবর্ষণে মোট ১১ জন শহীদ হন।

ছয় দফা প্রণয়ন সম্পর্কে প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তাঁর ‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে লিখেছেন : “কয়েক দিন পর মানিক মিয়ার ধানমণ্ডির বাসায় পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দাবি নিয়ে মধ্যরাতে গোপন বৈঠক বসে। এই বৈঠকে শেখ মুজিবুর রহমান ও মানিক মিয়া ছাড়াও নূরুল আমিন, হামিদুল হক চৌধুরী, আতাউর রহমান খান, আবুল মনসুর আহমদ, মোহন মিয়া, নান্না মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ছয় দফা নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়। নূরুল আমিন, হামিদুল হক চৌধুরী, নান্না মিয়া ও মোহন মিয়া দাবিগুলোর বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেন। অন্যরা সেই মুহূর্তে দাবিগুলো নিয়ে আন্দোলনে নামার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। শেখ মুজিব খসড়া প্রস্তাব আকারে দাবিগুলো যে কাগজে লেখা হয়েছিল সেটি তুলে নিয়ে বললেন, এই দাবিগুলো হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি জনগণের ‘ম্যাগনাকার্টা’। এই দাবির সঙ্গে আমরা অন্তত আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না। যদি আপনারা কেউ রাজি না হন, তাহলে আমাকে একাই এই দাবি পেশ করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে এবং আর কোনো দল না চাইলেও আওয়ামী লীগকে নিয়েই আমাকে আন্দোলনে নামতে হবে।” (‘ধীরে বহে বুড়িগঙ্গা’, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৭-১৫১)

পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের দাবিয়ে রাখতে চেয়েছে। অসাধারণ পর্যবেক্ষণশক্তির অধিকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরুতেই বুঝতে পেরেছিলেন বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানিদের এই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বঞ্চনা এবং নিপীড়নের বিষয়টি। দূরদর্শী বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে লাহোরে পাকিস্তানের সম্মিলিত বিরোধী দলের সভায় ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ছয় দফা পেশ করেন, যা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রথম কার্যকর পদক্ষেপ। সঙ্গে সঙ্গে তা রাজনৈতিক ও শাসক মহলসহ সারা পাকিস্তানে আলোড়ন সৃষ্টি করে।

১৯৮৫ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি পরিবারের বড় মেয়ে হিসেবে বাবাকে তখন খুব ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছি। যদিও আজ (১৯৮৫ সাল) থেকে ২০ বছর আগের কথা, তবু মনে হয় স্পষ্ট দেখছি বাবাকে। খাবার টেবিলে যদি আমরা বাবাসহ খেতে বসেছি কিংবা দুর্লভ সব মুহূর্তে বাবাকে ঘিরে বসে গল্প শুনছি, গল্প করছি তখন হঠাৎ বাবা বলতেন, এখন চুপ; বল তো কী আমাদের প্রতিজ্ঞা? আমরা ট্রেনিংপ্রাপ্তের মতো চটপট ছয় আঙুল তুলে বসে থাকতাম। বাবা খুশি হতেন। হ্যাঁ, এই ছিল আমাদের প্রতিজ্ঞা। বাবা সংগ্রাম করেছেন ছয় দফার জন্য। অতএব আমরা তাঁর সঙ্গে একাত্ম হয়ে এই সংগ্রামে শরিক হয়েছি। ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থানের সময় বাবা যখন খাবার টেবিলে খেতে বসতেন বা কথা বলতেন, তখন ছয় আঙুল তুলেই পাঁচ আঙুল সরিয়ে নিয়ে তিনি বলতেন, ‘এখন শুধু এক দফা।’ (সচিত্র সন্ধানীর সঙ্গে সাক্ষাৎকার, ১৯৮৫)।

ছয় দফাই শেষ পর্যন্ত এক দফার দাবিতে রূপান্তরিত হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে পরিণত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। কিন্তু স্বাধীন দেশেও ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি। জাতির জনককে সপরিবারে হত্যা করা হয়। জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা করা হতে থাকে। আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার সব আয়োজন চলতে থাকে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়নি। জাতি আবারও ছয় দফার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তিরিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষায় জীবন বাজি রেখে এগিয়ে এসেছে। ষড়যন্ত্রের সব জাল ছিন্ন করে আবারো বাঙালি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। জয় বাংলা ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হবে।

 

এই ওয়েবসাইটের সকল কোনো লেখা, ছবি, অডিও বা ভিডিও “পেজ দ্যা নিউজ” কতৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত কপি করা দন্ডনীয়। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করলে কতৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রাখে।