বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের সকল স্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আজ এক বিবৃতি প্রদান করেছেন। বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। প্রাচীনতা যদি গৌরবের অংশ হয় তাহলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেই গৌরবের ধারক। হাজার বছরের পরাধীনতা ভেঙে বাঙালিকে আরাধ্য স্বাধীনতার স্বাদ দেওয়ার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী দলটি জন্মলগ্ন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে। বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা মহান নেতা শেখ মুজিব নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে এবং আওয়ামী লীগকে একটি সমতা ও সম্প্রীতির আদর্শনির্ভর দল হিসেবে নির্মাণের কাজে। জাতির পিতার নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন আর সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের অভূতপূর্ব যুগপৎ রাজনৈতিক কৌশলের সমন্বয়, মিশ্রণ ও বিজয় অর্জন পৃথিবীর ইতিয়াসে এক বিরল ঘটনা, যা সম্ভব করেছে গণমানুষের দল-আওয়ামী লীগ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংগঠনের নিবেদিত বিশাল কর্মী বাহিনীর দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগই এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ত্যাগ-তিতিক্ষায় বিশ্ব মানচিত্রে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে বাঙালি জাতির হাজার বছরের লালিত স্বপ্ন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ২৩ জুন ২০২৫ বাঙালির জন্য স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ নির্মানের কারিগর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১৯৪৯ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সাড়ে সাত দশকের পথচলা মুক্তির আলোকবর্তিকা হয়ে উদ্ভাসিত থাকার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদানকারী দল। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর জন্য এটি অত্যন্ত আনন্দময় মুহূর্ত। আজকের এই শুভক্ষণে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের শহিদ সদস্যদের। অবনত মস্তকে শ্রদ্ধা জানাই, মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশসহ আরও অনেককে যাদের শ্রম-ঘামে আওয়ামী লীগের গোড়াপত্তন ও বেড়ে ওঠা। স্মরণ করছি, কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘাতকের বুলেটে নিহত জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামারুজ্জামানকে। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদ ও সম্ভ্রম হারানো তিন লাখ মা-বোনের প্রতি। সুদীর্ঘ এই অভিযাত্রায় যাদের ঘাম-শ্রম-মেধা আর আত্মত্যাগে গড়ে উঠেছে আজকের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, শ্রদ্ধা জানাই সেই সব মহৎ প্রাণের প্রতি।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, দক্ষতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনগঠনের কাজ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করে একটি ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে ‘৭১-এর পরাজিত শক্তি সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে। পথ হারায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রিয় বাংলাদেশ। এমনি এক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এই ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দিশেহারা জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার ঘটায়। নবোদ্যমে সংগঠিত হয় সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ও সুদূরপ্রসারী নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় জনগণের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা দেশটি ‘৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। মানুষের জীবনে নেমে আসে স্বস্তি। কিন্তু এই অগ্রযাত্রা আবারো বাধাগ্রস্ত হয়। ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিএনপি-জামাত অপশক্তি আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল।
সকল ষড়যন্ত্র, সকল অপচেষ্টাকে প্রতিহত করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়ায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভূমিধ্বস বিজয়ের মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার গঠন করে। এর পরে সরকারের ধারাবাহিকতার কারণে বাংলাদেশের চেহারাটা আমূল পাল্টে যাচ্ছিল। যে বাংলাদেশ ছিল অবহেলিত, দারিদ্র্যপীড়িত, যে বাংলাদেশকে নিয়ে পশ্চিমা বিশ্ব উপহাস করতো ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার দূরদর্শী, সুদক্ষ, সৃজনশীল ও সাহসী নেতৃত্বের ফলেই সেই বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়কর রোল মডেল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলার স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছিলেন, তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছিল তাঁরই কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের মাধ্যমে, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করার মাধ্যমে এবং দেশকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত করার মাধ্যমে। সুশাসন, স্থিতিশীল অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নয়নে গতিশীলতা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসেছিল অভূতপূর্ব সফলতা। উন্নয়নের এই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়েছিল। সেই বাংলাদেশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশবিরোধী ও স্বাধীনতাবিরোধী উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর প্রতিভূ ইউনূস গংরা অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করার অপচেষ্টা করছে। দেশের মানুষের জানমালের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি। মানুষের জীবন-জীবিকা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। হাজার-হাজার কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির সকল চাকা স্থবির ও জাতীয় সক্ষমতা দিনকে দিন হ্রাস পাচ্ছে। তার পরও অবৈধ দখলদাররা রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করে নির্বিচারে লাগামহীনভাবে দুর্নীতি করে যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যমগুলো শতভাগ নিয়ন্ত্রিত থাকলেও জন-আকাঙ্ক্ষার চাপে এসব দুর্নীতির কিছু কিছু খবর প্রকাশ পাচ্ছে। একদিকে এই ফ্যাসিস্ট ইউনূস গং জনগণের উপর ছড়ি ঘুরাচ্ছে। অন্যদিকে তাদের অপকর্মের প্রতিবাদ ও জনগণের অধিকার আদায়ের সোচ্চার হওয়ায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে এবং আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা করছে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে; আওয়ামী লীগের হাজার হাজার কার্যালয় ধ্বংস ও অগ্নিসংযোগ করে ভস্মীভূত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, আইনজীবী, সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের উপর অবর্ণনীয় অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। জঙ্গি মদদপুষ্ট এই অবৈধ দখলদার ফ্যাসিস্ট ইউনূস গংদের ষড়যন্ত্রে ও প্রত্যক্ষ মদদে আগস্টের আগে-পরে আওয়ামী লীগের যে সকল নেতাকর্মী নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তাদেরকে স্মরণ করছি। আমরা বলতে চাই, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের আবেগ মথিত, ভালোবাসায় সিক্ত রাজনৈতিক দল। এর আগেও অনেকবার এই দলকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই জনগণের নির্ভেজাল ও নিখাদ ভালোবাসা ও সমর্থনে এবং নেতাকর্মীদের ইস্পাত-দৃঢ় মনোবলের কারণে সকল অপশক্তিকে মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, আওয়ামী লীগ বার বার হত হলেও কখনো কোনো অপশক্তির কাছে মাথা নত করেনি। জনগণের কল্যাণের ব্রত নিয়ে আপসহীনভাবে লড়াই চালিয়ে গেছে। বরাবরের ন্যায় এবারও জনগণের ঐক্যবদ্ধ সমর্থনে এই লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ জয়ী হবে এবং উন্নয়ন-অগ্রগতির কক্ষপথ থেকে চ্যুত হওয়া বাংলাদেশকে পুনরায় জনকল্যাণমুখী বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে। গণবিরোধী ফ্যাসিস্ট ইউনূসের দুঃশাসনের অমানিশার অন্ধকার কাটিয়ে আগামীর সময় বাংলাদেশের জনগণের।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস জনগণ, শক্তির উৎস সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। নেতা-কর্মীদের ইস্পাতদৃঢ় মনোবল এবং ঐক্যবদ্ধতার ফলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হয়নি, কোনোদিন হবেও না, ইনশাল্লাহ।
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।